অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে দেখা করেছেন। বাইডেন প্রশাসনকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) মাহমুদ আব্বাসের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তিনি সুলিভানকে বলেছেন, নতুন ইসরায়েলি জোটের নীতি এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনের অবশিষ্ট সম্ভাবনাকে ধ্বংস করছে।’ তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘এই একতরফা পদক্ষেপ বন্ধ করতে ‘দেরি হওয়ার আগেই’ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
সুলিভান ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গেও দেখা করেছেন। গত মাসে ইসরায়েলের সবচেয়ে ডানপন্থি সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে দুই মিত্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিগত আলোচনা এটি।
নেতানিয়াহুর নীতি ও তার অতি-জাতীয়তাবাদী এবং অতি-অর্থোডক্স শাসক জোটের বেশ কয়েকজন সদস্যের ওপর ওয়াশিংটনে অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে সুলিভানের এ সফরের খবর এলো।
ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে ইসরায়েলের নতুন সরকার এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ ইহুদি বসতি নির্মাণের কাজ শুরু করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলের নতুন সরকার এরই মধ্যে বাইডেন প্রশাসনের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি ফিলিস্তিনিদের নিন্দা ও তীব্র আপত্তি উপেক্ষা করেই আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইতেমার বেন-গাভিরের সফরের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়। সফরে, আল আকসাকে হামাসের সম্পদ হতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন বেন গাভির।
মার্কিন কর্মকর্তারা এর আগে অন্তত দুই ডানপন্থি শীর্ষ ক্যাবিনেট মন্ত্রী বেন-গাভির এবং বেজালেল স্মোট্রিচ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। যারা অতীতে তীব্র ফিলিস্তিন-বিরোধী মতামত প্রকাশ করেন। তা সত্ত্বেও, ওয়াশিংটন বলছে, তারা নেতানিয়াহু সরকারের সঙ্গে তার নীতির ভিত্তিতে সম্পৃক্ত থাকতে পারে, ব্যক্তির ভিত্তিতে নয়।
বেন-গাভির, একজন আইন প্রণেতা, যিনি আরব বিরোধী ও উসকানিমূলক বক্তব্যের জন্য পরিচিত। ফিলিস্তিন বিরোধী মত পোষণকারী ধর্মীয় ইহুদিবাদী দলের নেতা স্মোট্রিচ ফিলিস্তিনি নাগরিকবিষয়ক ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা সংস্থার তত্ত্বাবধান করেন।
আব্বাস সুলিভানের কাছে ইসরায়েলের অবৈধ বসতি নির্মাণ ও প্রতিদিনই ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা ও শহরে অনুপ্রবেশ বন্ধ করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
বৃহস্পতিবারও উত্তর পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গ্রেফতার অভিযানে দুই ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ১৮ বছরের মধ্যে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের জন্য গত বছর ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ বছর।
আব্বাস পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আমেরিকান সম্পর্ক তত্ত্বাবধানকারী জেরুজালেমে মার্কিন কনস্যুলেট পুনরুদ্ধার এবং ওয়াশিংটনে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের অফিস পুনরায় খোলার অনুরোধ জানান। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের শাস্তিমূলক পদক্ষেপগুলো তুলে নেওয়ার জন্য সুলিভানের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।
এদিকে, নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও চারটি আরব দেশের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে হওয়া স্বাভাবিকীকরণ চুক্তিকে প্রসারিত করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন দুই নেতা।
বৈঠকের প্রকাশিত ফুটেজ থেকে জানা যায়, নেতানিয়াহু সুলিভানকে বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ৪০ বছর ধরে ইসরায়েলের একজন মহান বন্ধু হিসেবে চিনি। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এবং অবশ্যই শান্তির অগ্রগতির ক্ষেত্রে আমরা আপনাকে একজন বিশ্বস্ত অংশীদার হিসাবে দেখি।’ সুলিভান নেতানিয়াহুকে বলেন, বাইডেনের ‘ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতি প্রতিশ্রুতি অনেক গভীর।’
সুলিভান মোসাদের প্রধানসহ ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। সূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড
Leave a Reply